বৃষ্টি পড়ছে ঝিরঝিরে


আমাদের যশোর প্রকাশের সময় : জুলাই ১৫, ২০২৫, ৯:০২ অপরাহ্ণ / 5
বৃষ্টি পড়ছে ঝিরঝিরে

বৃষ্টি পড়ছে ঝিরঝিরে, গা জুড়ানো নয়। বরং হাড় কাঁপানো ঠান্ডা নিয়ে। শহরের এক কোনায় ফুটপাথ ঘেঁষে গুটিসুটি মেরে বসে আছে ছয়-সাত বছরের এক ছেলে। নাম তার রাফি। একটা পুরোনো পলিথিন তার ছাতার কাজ করছে, আর একজোড়া ছেঁড়া স্যান্ডেল তার পায়ে যেন উপহাস করছে বৃষ্টি থেকে কেউ বাঁচে না।
রাফি কোনো এক নামহীন গ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছিল মাসখানেক আগে। মা মারা গেছেন আগেই, বাবা ছিলÑকিন্তু একদিন আর ফিরে আসেনি। তারপর তার জীবন হয়ে যায় স্টেশনের পাটাতনে ঘুমানো, হকারদের ভাঙা বাক্স টানার কাজ, কিংবা ট্রাফিক সিগন্যালে দাঁড়িয়ে হাত পাতা। কারও দয়া হয়, কারও চোখ যায় না ওদিকে।
আজকের দিনটা অন্যরকম। বৃষ্টি শুরু হয়েছে সকাল থেকে, একটানা। কেউ আর থামে না রাস্তায়, কেউ আর পকেট থেকে টাকা বের করে না। গাড়ির কাঁচ তোলা, হর্ন বাজে, চোখে বিরক্তি। রাফির মতো ছেলেরা তখন হয়ে যায় আরও অদৃশ্য।
তার সাথে ছিল ছোট্ট বোন, মিনা। বয়সে রাফির চেয়ে দুই বছর ছোট। দুইজন মিলে দুপুরে এক দোকানের পেছনে ফেলে দেওয়া পুরনো রুটির টুকরো খেয়েছিল। এখন সন্ধে, আর তাদের ঠাঁই নেই কোথাও। ফুটপাথে সব জায়গায় জলের ধারা বয়ে যাচ্ছে, যেন ছোট নদী। তারা গুটিশুটি মেরে বসে থাকে এক ভাঙা রিকশার নিচে। পানি ঢ়ুকছে, কাঁথা ভিজে গেছে, কিন্তু কিছুই করার নেই।
“তুই কাঁদিস না তো, আমি আছি’’, বলে রাফি মিনার মাথায় হাত রাখে।
মিনা কাঁপতে কাঁপতে বলে, “মা থাকলে না, এই বৃষ্টিতে আমাদের কোলে নিয়ে গান গাইতো..’’ রাফির গলা শুকিয়ে আসে। সে কিছু বলে না। শুধু ভাবে এই শহর এত আলো, এত গাড়ি, এত দোকান অথচ তাদের জায়গা নেই একফোঁটা। ছেলেটা চায় না দয়া, শুধু একটা শুকনো কোন, একটু উষ্ণতা, একটু মানুষ হয়ে বাঁচা। রাতে পুলিশ আসে ফুটপাথ তাড়াতে। রাফি মিনাকে নিয়ে দৌড়ায়, পিছলে যায় একবার। তারপর একটা ভাঙা ট্রলারের নিচে আশ্রয় খুঁজে পায় নদীর ঘাটে। পেছনে শহর জ্বলে ওঠে আলোয়, সামনে বৃষ্টি, আর মাঝখানে রাফিÑএকজন নামহীন পথশিশু, যাকে কেউ চেনে না, কেউ খোঁজে না। তবু সে বাঁচে। মিনার জন্য, নিজের অস্তিত্বের জন্য। আর অপেক্ষা করেÑএকদিন যদি কারও চোখ পড়ে তার দিকে, যে বলবে ।“এই বৃষ্টির নিচে কেউ যেন কাঁপে না, কেউ যেন শুয়ে না থাকে ভিজে…’’