তরুণ প্রজন্মকে বাঁচাতে স্কুল-কলেজের সামনে সিগারেট বিক্রি বন্ধ করুন


আমাদের যশোর প্রকাশের সময় : অক্টোবর ১৬, ২০২৫, ৪:০১ অপরাহ্ণ / 17
তরুণ প্রজন্মকে বাঁচাতে স্কুল-কলেজের সামনে সিগারেট বিক্রি বন্ধ করুন

তরুণ প্রজন্ম একটি দেশের স্বপ্ন ও ভবিষ্যৎ। কিন্তু আজকের দিনে নেশার করালগ্রাসে এ প্রজন্মের একটি বড় অংশ ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে ধূমপান, যা সহজলভ্য হওয়ার কারণে কিশোর ও তরুণদের জন্য ভয়াবহ ঝুঁকি তৈরি করছে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, স্কুল-কলেজের গেটের সামনেই অসংখ্য দোকানে সিগারেট বিক্রি হয়। ফলে কিশোর বয়সেই নেশার পথে পা বাড়ানো তাদের জন্য হয়ে ওঠে খুব সহজ। এই পরিস্থিতি শুধু একটি সামাজিক সমস্যা নয়, বরং একটি জাতীয় সংকট। তাই এখনই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে—স্কুল-কলেজের সামনে সিগারেট বিক্রি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৮০ লাখ মানুষ তামাকের কারণে মারা যায়। বাংলাদেশে এই সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার। সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হলো, ধূমপান শুরু হয় সাধারণত কৈশোরে। অনেক ক্ষেত্রে বন্ধুর প্ররোচনা, কৌতূহল বা সহজলভ্যতার কারণে তরুণরা প্রথম সিগারেট হাতে নেয়। একবার অভ্যাসে পরিণত হলে তা থেকে বেরিয়ে আসা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। স্কুল-কলেজের গেটের সামনে দোকানে সিগারেটের খোলা বিক্রি তরুণদের জন্য যেন প্রলুব্ধ করার ফাঁদ। ক্লাস শেষে বন্ধুদের আড্ডায়, বা স্কুল ফাঁকি দিয়ে ধূমপান শুরু হয় অনেকের। অভিভাবকরা ঘুণাক্ষরেও টের পান না কখন তাদের সন্তান নেশার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশে বিদ্যমান “তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন” অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতালসহ জনসমাগমস্থলের ১০০ গজের মধ্যে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু বাস্তবে এ আইন প্রায় অকার্যকর। বেশিরভাগ দোকানদাররা অল্পবয়সীদেরও সিগারেট বিক্রি করে থাকে, অথচ তদারকি নেই। স্থানীয় প্রশাসন বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঝে মাঝে অভিযান চালালেও তা নিয়মিত হয় না।

উদাহরণস্বরূপ, ঢাকা শহরের প্রায় প্রতিটি স্কুল-কলেজের গেটের বাইরে ৫০ থেকে ১০০ মিটারের মধ্যে সিগারেট বিক্রির দোকান পাওয়া যায়। গ্রামাঞ্চলেও একই অবস্থা। ফলে আইন থাকার পরও তা তরুণদের রক্ষা করতে পারছে না। তামাক কোম্পানিগুলো নিজেদের ব্যবসা বাঁচাতে নানা কৌশলে তরুণদের টার্গেট করে। তারা সিগারেটের ছোট প্যাকেট বাজারে আনে, যাতে দাম কম হয় এবং ছাত্রছাত্রীরা সহজে কিনতে পারে। এ ছাড়া দোকানদাররাও মুনাফার আশায় বয়স যাচাই না করেই সিগারেট বিক্রি করে দেয়। অথচ এটি শুধু আইন ভঙ্গ নয়, সামাজিক অপরাধও বটে।

অভিভাবক, শিক্ষক ও স্থানীয় প্রশাসন যদি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন না করেন, তবে তরুণদের নেশামুক্ত রাখা সম্ভব হবে না। সমাজের প্রতিটি মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে যে, আজকের তরুণই আগামী দিনের নেতৃত্ব দিবে।

বিশ্বের অনেক দেশেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশপাশে তামাক বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, থাইল্যান্ডে স্কুলের ৫০০ মিটারের মধ্যে তামাক বিক্রি করলে দোকান মালিককে বড় অঙ্কের জরিমানা ও লাইসেন্স বাতিলের বিধান রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অঙ্গরাজ্যে ২১ বছরের নিচে কাউকে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি করলে সরাসরি আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এসব উদাহরণ থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশেও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে আমরা তরুনদের বাঁচাতে পারি যেমন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১০০ গজের মধ্যে সিগারেট বিক্রি বন্ধে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালাতে হবে। দোকান লাইসেন্সের শর্ত: যে দোকান আইন ভঙ্গ করবে, তার ব্যবসা লাইসেন্স বাতিল করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সচেতনতা কর্মসূচি: শিক্ষার্থীদের নেশার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে নিয়মিত সেমিনার আয়োজন করতে হবে। অভিভাবক ও শিক্ষকদের ভূমিকা: সন্তানদের আচরণে পরিবর্তন লক্ষ্য করলে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। সিগারেটের দাম বৃদ্ধি: ছোট প্যাকেট বিক্রি বন্ধ এবং তামাকের ওপর কর বাড়াতে হবে, যাতে তা তরুণদের নাগালের বাইরে থাকে।

তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা করা মানে দেশের ভবিষ্যৎকে রক্ষা করা। স্কুল-কলেজের গেটের সামনে সিগারেট বিক্রি বন্ধ করা কোনো সাধারণ প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নয়, এটি একটি জাতীয় দায়িত্ব। আইনকে কার্যকরভাবে প্রয়োগ করতে হবে এবং সমাজকেও নেশা বিরোধী আন্দোলনে শামিল করতে হবে। যদি এখনই ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে একসময় আমাদের তরুণ প্রজন্ম নেশার অন্ধকারে তলিয়ে যাবে, আর সেই দায় পুরো সমাজকেই নিতে হবে।