
নিজস্ব প্রতিবেদক: মুখ আর থুতনি দিয়ে লিখেই এসএসসিতে জিপিএ -৫ পেয়েছেন লিতুন জিরা। হাত-পা ছাড়াই জন্ম নেয়া লিতুনের এ সাফল্য সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। সব বিষয়ে এ প্লাস পেয়েছেন তিনি। ভবিষ্যতে চিকিৎসক হয়ে সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্টী ও অসহায় গরীব-দুঃখীদের সেবা করার ব্রত নিয়ে এগিয়ে যাবার অভিপ্রায় লিতুন জিরার।
খোজ খবর নিয়ে জানা গেছে, যশোরের মনিরামপুর উপজেলার সাতনল খানপুর গ্রামের প্রভাষক হাবিবুর রহমান ও মোছাঃ জাহানারা বেগম দম্পতির একমাত্র কন্যা সন্তান লিতুন জিরা। সমাজের ৮/১০ জন স্বাভাবিক শিশুর মতো বেড়ে উঠেননি লিতুন জিরা। একাগ্রতা, প্রবল ইচ্ছা শক্তি আর শত প্রতিকূলতাকে জয় করে সামনে এগিয়ে যাবার দৃঢ় প্রত্যয়ে সাফল্যের অগ্রযাত্রায় শারীরিক প্রতিবন্ধকতা বাঁধা হতে পারেনি। অদম্য মেধাবী লিতুন জিরা পঞ্চম শ্রেনির সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ-৫,বৃত্তি লাভসহ গান, কবিতা আবৃত্তি, রচনা প্রতিযোগিতায় উপজেলা,জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে পুরষ্কার পেয়েছে।
এই অভাবনীয় সাফল্যে বাবা- মা,শিক্ষক মন্ডলী প্রতিবেশিরা উচ্ছাসিত। আগামীর জন্য সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন লিতুন জিরাসহ তার বাবা-মা। তার এই সাফল্যের পথ মোটেই মসৃন ছিল না। সেই শিশু শ্রেনি হতে আজ অবধি হুইল চেয়ারে করে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতে হয় লিতুন জিরাকে। এজন্য কখনো বাবা আবার কখনো মা হুইল চেয়ার ঠেলে লিতুন জিরাকে বিদ্যালয়ে আনা-নেয়া করতেন। জানা যায়, উপজেলার গোপালপুর স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় লিতুন জিরা। ২০১৯ সালে পঞ্চম শ্রেনির সমাপনী পরীক্ষায় মেধার স্বাক্ষর রেখে ৬ষ্ঠ শ্রেনিতে ভর্তি হন গোপালপুর স্কুল এন্ড কলেজে। বিদ্যালয়ের প্রতিটি পরীক্ষায় সাফল্য ধরে রেখে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে এই কৃতির স্বাক্ষর রাখলো লিতুন জিরা। মেয়ের ভাল ফলাফলে অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে লিতুন জিরার মা মোছাঃ জাহানারা বেগম জানান, ভুমিষ্টের পর দেখতে পান হাত-পা ছাড়াই এক কন্যা সন্তান জন্ম নিয়েছে। আত্বীয়স্বজনসহ প্রতিবেশির অনেকেই মেয়েকে নিয়ে নানা কথা বলতো। সব নিরবে হজম করেছেন আর শাড়ির আঁচলে চোখের পানি মুচেছেন। আদর করে স্বামী-স্ত্রী মিলে মেয়ের নাম রাখেন লিতুন জিরা। একটা সময় মেয়ে লিতুন জিরার ভবিষ্যত নিয়ে চোখের পানিতে অনেক রাত পার করেছেন তিনি। তারপরও দমেননি তিনি। একটু বড় হলে মেয়ের মেধা এবং লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ তাকে আশান্বিত করে। আর এখতো মেয়েকে নিয়ে গর্ব করেন তিনি। লিতুন জিরা জানায়, ভবিষ্যতে তিনি সব প্রতিক’লতাকে জয় করে চিকিৎসক হয়ে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্টীসহ আর্তমানবতার সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিতে চাই। এজন্য সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করেছে লিতুন জিরা।
লিতুন জিরার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল ইসলাম জানান, হাত-পা ছাড়াই জন্ম নিয়ে লেখাপড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহ, একাগ্রতা ও কঠোর পরিশ্রম লিতুন জিরার এই সাফল্যের মূ চাবিকাঠি। তিনি লিতুন জিরার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করেছেন।
এদিকে, এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়ার খবরে শুক্রবার (১১ জুলাই) লিতুন জিরার বাড়িতে যান মনিরারপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত তামান্না। লিতুন জিরাকে ফুলের শুভেচ্ছা জানিয়ে নিজের হাতে মিষ্টি মুখ করান ইউএনও নিশাত তামান্না। মনিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্না বলেন, প্রশাসন সব সময় লিতুন জিরার পাশে থাকবে। একাগ্রতা ও প্রবল ইচ্ছা শক্তি থাকলে সব কিছু অর্জন করা যায় তার নজির স্থাপন করেছে লিতুন জিরা।
আপনার মতামত লিখুন :