
সুন্দরবনের প্রাকৃতিক প্রহরী এক সময় চোরা শিকারিদের অপতৎপরতায় বাঘের সংখ্যা কমে গেল ২০১৫ সালে থেকে বাঘের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে।পর্যটকদের আকর্ষণীয় এ রয়েল বেঙ্গল টাইগার এক সময় সারা বছরেও কারো চোখে না পড়লেও এখন মাঝে মধ্যে চোখে পড়ছে পর্যটকও বনরক্ষীদের। সর্বশেষ জরিপে সুন্দরবনের বাঘ রয়েছে ১২৫টি।তার মধ্যে ৫৯ শতাংশ বাঘ রয়েছে বাগেরহাট জেলার সুন্দরবনে।মা বাঘের সাথে ২১টি বাচ্চা থাকলেও তা গণনার অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।বনরক্ষীদের কঠোর নজরদাড়ির কারনে বাঘ শিকারিরা বনে ডুকে বাঘ শিকার করতে পারে না। যে কারনে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় পর্যটক ও বনরক্ষীদের চোখে পড়ছে বলে বন বিভাগ দাবি করছে। সুন্দরবনের বনদস্যু ও ডাকাতের কারণে তুলনামূলকভাবে বাঘ বাড়ছে না বলে ডিএফও জানিয়েছে।বাঘ সুরক্ষায় সুন্দরবনের একটি প্রকল্প চালু রয়েছে যা শেষ হবে আগামী ২০২৬ সালে।
বন বিভাগ সূত্র জানায় সুন্দরবনের বাঘসহ বন্যপ্রাণী আবাসস্থল বৃদ্ধি করা হয়েছে।৬ লাখ ১ হাজার ৭ শত হেক্টরের মধ্যে ৩ লাখ ১৭ হাজার ৯৫০ হেক্টর অভয়ারণ্য বন রয়েছে।যা ১৯৯৬ সালে মোট বনের ২৩ শতাংশ এবং পরে সম্প্রসারণ করায় বর্তমানে ৫৩ শতাংশ অভয়ারণ্য এলাকা রয়েছে।যার আয়তন ৩ লাখ ১৭ হাজার ৯৫০ হেক্টর।
বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০০৪ সালে এক জরিপে ২১ টি বাচ্চা সহ বাঘের সংখ্যা ছিল ৪৪০ টি।২০০৯ সালে বনবিভাগ এক জরিপে ৪০০ থেকে ৪৫০ বাঘের সন্ধান পান। ১৩ সালের নভেম্বর থেকে ১৫ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত এক জরিপে বাঘের সংখ্যা কমে দাঁড়ায় মাত্র ১০৬ টি। ২০১৬ সালের পহেলা ডিসেম্বর থেকে ১৮ সালের ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত ২২৯ দিনে ১৬৫৯ কিলোমিটার এলাকায় ২৪৯ টি জায়গায় গাছের সাথে ৪৯১ টি সর্বাধুনিক ক্যামেরা ট্রাকিং পদ্ধতিতে জরিপে বাঘের সংখ্যা দাঁড়ায় ১১৪টি।২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত এক জরিপে বাঘের সংখ্যা দাঁড়ায় ১২৫ টিতে। সুন্দরবনের ৬০৫টি গ্রিটে ১২১০টি ক্যামেরা ৩১৮ দিন রেখে এ জরিপ চালানো হয়।ভারত নিউজিল্যান্ড মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞ দলের মতামতের ভিত্তিতে জরিপের ছবি ও তথ্য বিশ্লেষণ করে বাঘের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়। ১০ লক্ষাধিক ছবি ভিডিও থেকে ৭২৯৭টি বাঘের ছবি পাওয়া যায়। যা এর আগে কখনই পাওয়া যায়নি।এ জরিপ সম্পন্ন করতে ব্যয় ধরা হয় ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
এদিকে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় শরণখোলা রেঞ্জ এলাকায় আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ১১ জুলাই পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জ অফিস সংলগ্ন এলাকায় বাঘ হানা দেয়।এ সময় বাঘের তারা খেয়ে ৮/১০ টি হরিণ অফিসের সামনে এসে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। পরে অফিসের কাছাকাছি বাঘের পায়ের ছাপ দেখা গেছে।এর আগে গত ৪ জুলাই একই এলাকায় বাঘের উপস্থিতি ট্রেন পাওয়া যায়। ফলে বনরক্ষীদের চলাচল বিঘ্ন ঘটে।এক পর্যায় বনরক্ষীরা দুইদিন পর ফাঁকা গুলি ছোড়ে বাঘ তাড়াতে হয়। চলতি বছরের গত ১৯ জানুয়ারি দুপুরে একই রেঞ্জের কটকা অভয়ারণ্য এলাকার বেতমোর নদীর পাড়ে একত্রে ৩টি বাঘ দেখতে পায় পর্যটকরা। যা ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল করিম চৌধুরী এ প্রতিনিধিকে বলেন ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত যেভাবে বা বৃদ্ধি পেয়েছে তা তুলনা মূলক ভাবে কম। এর সংখ্যা যদি ১৫০ থেকে ২০০ টিতে দাঁড়ায় সেটা স্বাভাবিক বলে আমার মনে হবে। তিনি আরো বলেন সুন্দরবন থেকে যদি বনদস্যু ও ডাকাত নির্মূল করা যায় তবেই বৃদ্ধি পাবে বাঘের সংখ্যা।সরকারি ও বিভিন্ন এনজিওগুলো আন্তরিকভাবে কাজ করলে বাঘ শিকার বন্ধ হবে। সুন্দরবনের বনদস্যু ও ডাকাতের কারণে তুলনামূলকভাবে বাঘ বাড়ছে না। সুন্দরবন থেকে বনদস্যু ও ডাকাত নির্মূল করা জরুরি হয়ে পড়েছে। গত দেড় বছরে সুন্দরবনে শরণখোলা রেঞ্জে কটকায় এলাকায় বার্ধক্যজনিত কারণে একটি বাঘের মৃত্যু হয়েছে ।বাঘ সুরক্ষায় সুন্দরবনের একটি প্রকল্প চালু রয়েছে। যা শেষ হবে আগামী ২০২৬ সালে।আজ ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবস উপলক্ষে সুন্দরবনে চারটি রেঞ্জে এক যোগে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে পালিত হয়। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রেলি, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, বাঘ সংরক্ষণ ও শিকার প্রতিরোধে আলোচনা সভা এবং লিফলেট বিতরণ।
আপনার মতামত লিখুন :